গাজার ৮৫% এলাকা হাতছাড়া
গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকা হয় ইসরায়েলের সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, নয়তো উচ্ছেদ আদেশের আওতায় রয়েছে। কোনো কোনো এলাকায় আবার উভয় পরিস্থিতিই বিদ্যমান। যুক্তরাষ্ট্রের দুই মাসের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ও তীব্র হামলায় প্রতিদিন ব্যাপক হতাহতের মধ্যে জাতিসংঘ এ তথ্য জানাল। উপত্যকার প্রায় সব বাসিন্দা বারবার বাস্তুচ্যুতির শিকার হয়ে বিভিন্ন তাঁবুতে অবস্থান করছেন।
জাতিসংঘ মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাস্তুচ্যুতির আদেশ গাজার বাসিন্দাদের জরুরি সহায়তা পাওয়া থেকে মারাত্মকভাবে বঞ্চিত করছে। বিপদে থাকা মানুষের কাছে ত্রাণকর্মীদের পৌঁছানো কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি জানান, সর্বশেষ খান ইউনিসের দুটি এলাকায় উচ্ছেদ আদেশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ বাস করে। জাতিসংঘের পানি,
স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করা অংশীজন জানিয়েছেন, এ আদেশের কারণে আল সাতার নামের একটি গুরুত্বপূর্ণ জলাধারে এখন প্রবেশ করা যাচ্ছে না।
বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানায়, আল সাতার খান ইউনিসের প্রধান পানি সরবরাহ কেন্দ্র এবং ওই এলাকায় ইসরায়েলি পাইপলাইন থেকে আসা পানির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। ডুজারিক বলেন, জলাধারটির কোনো ক্ষতি হলে শহরের পানি সরবরাহ ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। ফলে ভয়াবহ মানবিক সংকট সৃষ্টি হবে।
সতর্ক করে ডুজারিক বলেন, উচ্ছেদ আদেশগুলো জরুরি পরিষেবার ওপর চাপ সৃষ্টি করছে এবং মানুষকে ক্রমেই আরও সংকীর্ণ এলাকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তিনি বলেন, মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত গাজায় প্রায় ৭ লাখ ১৪ হাজার মানুষ আবার জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। শুধু গত রোববার থেকে সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ২৯ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হন। তিনি বলেন, গত চার মাসে গাজায় কোনো আশ্রয় সহায়তা পৌঁছেনি। আমাদের আশ্রয় সহায়তাদানকারী অংশীদাররা জানিয়েছে, জরিপ করা স্থানগুলোর ৯৭ শতাংশ এলাকায় বাস্তুচ্যুত মানুষ খোলা জায়গায় বাস করছে।
‘নির্মমতম গণহত্যা’, বললেন জাতিসংঘ দূত
ইসরায়েলের সঙ্গে আর্থিক ও বাণিজ্য সম্পর্ক ছিন্ন করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিসকা আলবানিজ। সেই সঙ্গে তিনি তেল আবিবকে
অস্ত্র দেওয়া থেকে বিরত থাকারও আহ্বান
জানান। গাজায় গণহত্যা বন্ধে এসব পদক্ষেপ নিতে বলেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া বক্তব্যে অধীকৃত ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের এ বিশেষ প্রতিনিধি বলেন, ‘আধুনিক ইতিহাসের সবচেয়ে নির্মমতম গণহত্যাগুলোর একটি সংঘটনের জন্য ইসরায়েল দায়ী।’ দ্য গার্ডিয়ান অনলাইন জানায়, আলবানিজের এ বক্তব্যকে ব্যাপক করতালি দিয়ে স্বাগত জানান উপস্থিত লোকজন।
১২ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ আরও ১১৮ জন নিহত
ইসরায়েলের অব্যাহত বিমান হামলা ও গুলিতে গাজায় এক দিনে আরও ১১৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৫৮১ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানায়, নিহতদের মধ্যে ১২ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে ইসরায়েল। তারা পরিবারের জন্য ত্রাণ সংগ্রহ করতে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত সরবরাহ কেন্দ্রে এসেছিলেন।
গত দুই দিনে সব মিলিয়ে তিন শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ সময় ইসরায়েল ২৬টি রক্তাক্ত হামলা চালায়। হামলা হয়েছে স্কুলে তৈরি করা আশ্রয়কেন্দ্র ও তাঁবুতে। গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে দেড় মাসে ৬৫০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের পর এ পর্যন্ত গাজায় ৫৭ হাজার ১৩০ জন নিহত ও ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৩ জন আহত হয়েছেন।
বিমান হামলায় প্রাণ গেল অভিজ্ঞ চিকিৎসকের
ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গাজার একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সপরিবারে নিহত হয়েছেন। ইতোমধ্যে বিপর্যস্ত গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য এটা বড় এক ধাক্কা।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
বার্তা সম্পাদক
মাহবুব আলম সৈকত
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
Email: news@prothomdesh24.com
©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || প্রথম দেশ
Develop by _ DigitalSolutions.Ltd