এবার কোরবানির ঈদে পশুর চামড়ার দাম আগের বছরের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও, তা সরকারের নির্ধারিত দামের তুলনায় অনেকটাই কম ছিল। ঢাকায় লবণবিহীন বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া ৬০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ছোট বা নিম্নমানের গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে। তবে রাজধানীর বাইরের বাজারে এই দাম আরও কম ছিল।
সরকার এবার প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত চামড়ার দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করলেও বাস্তবে অনেক এলাকায় এর অর্ধেক দামে চামড়া কেনাবেচা হয়েছে।
গরিবদের প্রাপ্য ‘হক’ থেকে বঞ্চিত
অনেক এলাকায় মানুষ অভিযোগ করেছেন, দরদাম করেও কাঙ্ক্ষিত দাম মেলেনি। ফলে গরিব, অসহায় ও মিসকিনদের সহায়তায় যে টাকা দেওয়া হয়, সেটাও কমে যাচ্ছে। এক কোরবানিদাতা বলেন, “৭-৮ বছর আগে যে গরুর চামড়া ১৮০০-২০০০ টাকায় বিক্রি করতাম, এবার সেটা ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে। গরুর দাম দ্বিগুণ হলেও চামড়ার দাম কমেছে কয়েকগুণ।”
সিন্ডিকেট ও দাম নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ
অনেকে মনে করছেন, সিন্ডিকেট করে দাম কমিয়ে রাখা হচ্ছে। কারণ, চামড়ার দাম কমলেও চামড়াজাত পণ্যের দাম কমেনি, বরং বেড়েছে।
ছাগলের চামড়া নিয়ে বিড়ম্বনা
ছাগলের চামড়া বিক্রি নিয়ে আরও বেশি হতাশা দেখা গেছে। অনেকেই ছাগলের চামড়া ফেলে দিয়েছেন বা বিনামূল্যে দিয়ে দিয়েছেন। যারা বিক্রি করতে পেরেছেন, তারাও পেয়েছেন মাত্র ২০-৫০ টাকা।
আড়তদারদের ভাষ্য
ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা বলছেন, এবার ৮০-৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল এবং ঈদের দিন চামড়ার সরবরাহও ভালো ছিল। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা এবার আর আগের মতো চামড়া ফেলে দেননি বা নষ্ট করেননি। অনেক ব্যবসায়ীর দাবি, এবার তারা গতবারের তুলনায় ১০০-১৫০ টাকা বেশি দামে চামড়া কিনেছেন। তবে খরচও বেড়েছে—লবণ, কেমিক্যাল, লেবার ও গোডাউন ভাড়া—সবকিছুর দামই বাড়তি।
বাজার পরিস্থিতি ও সরকারি উদ্যোগ
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ জানিয়েছেন, এবার বাজার পরিস্থিতি ভালো, আবহাওয়াও অনুকূলে ছিল। সরকার প্রথমবারের মতো বিনামূল্যে লবণ দিয়েছে, যা চামড়া সংরক্ষণে সহায়তা করেছে। এর ফলে এবার চামড়া নষ্ট হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।
সরকার আরও কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন:
সারা দেশে ৩০ হাজার টন লবণ বিনামূল্যে বিতরণ।
‘ওয়েট ব্লু’ ও কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ।
ঢাকার বাইরে থেকে ১০ দিন চামড়া ঢাকায় আনা নিষিদ্ধ।
চামড়া রপ্তানি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১০৩ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১২% কম। তবে কাঁচা চামড়া রপ্তানির সুযোগ এবং অন্যান্য উদ্যোগের কারণে ভবিষ্যতে এই খাত ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশা করছে সরকার।
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
ইব্রাহিম শরীফ মুন্না
বার্তা সম্পাদক
মাহবুব আলম সৈকত
ডা. নওয়াব আলী টাওয়ার, ২৪ পুরানা পল্টন, ঢাকা থেকে প্রকাশিত।
Email: news@prothomdesh24.com
©২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত || প্রথম দেশ
Develop by _ DigitalSolutions.Ltd